গৃহ ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি বা পর্যায়

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - গৃহ ব্যবস্থাপনা | | NCTB BOOK

গৃহ ব্যবস্থাপনার সংজ্ঞা হতে স্পষ্ট ধারণা করা যায় যে, গৃহ ব্যবস্থাপনা পারিবারিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য কতোগুলো ধারাবাহিক কর্মপদ্ধতির সমষ্টি মাত্র। এ পদ্ধতিগুলো ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন করতে হয় বলে এগুলোকে গৃহ ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি বা পর্যায় বলা হয়। পদ্ধতিগুলো হলো— পরিকল্পনা, সংগঠন, নিয়ন্ত্রণ, মূল্যায়ন। প্রতিদিনের কাজে সচেতনভাবে এই ধাপগুলো আমাদের অনুসরণ করতে হয়। লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে প্রতিদিনের কাজের পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা থেকে আরম্ভ করে মূল্যায়ন, সংগঠন, নিয়ন্ত্রণ, ধারাবাহিকভাবে চক্রাকারে চলতে থাকে। গৃহ ব্যবস্থাপককে পরিকল্পনা প্রণয়নকারী, সংগঠক, নিয়ন্ত্রণকারী ও মূল্যায়নকারীরূপে দায়িত্ব পালন করতে হয়।

পরিকল্পনা

গৃহ ব্যবস্থাপনার প্রথম ধাপ পরিকল্পনা করা। লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে যে সব কর্মপন্থা অবলম্বন করা হয় তার পূর্বে কাজটি কীভাবে করা হবে, কেন করা হবে ইত্যাদি সম্বন্ধে চিন্তাভাবনা করার নাম পরিকল্পনা। অর্থাৎ পরিকল্পনা হলো পূর্ব থেকে স্থিরকৃত কার্যক্রম।

সদস্যদের মধ্যে অবশ্যই ভালো সম্পর্ক থাকতে হবে। সম্পর্ক ভালো থাকলে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সহজতর হয়।

পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় কিছু বিষয় বিবেচনায় আনতে হয়। যেমন- পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের মতামত যাচাই করে এবং প্রত্যেকের সুবিধা-অসুবিধার কথা চিন্তা করে পরিকল্পনা করতে হবে।

বিভিন্ন কার্যকলাপে সফলতা লাভ করতে হলে সদস্যদের দক্ষতা, ক্ষমতা, অভিজ্ঞতা, কাজ করার ইচ্ছা- অনিচ্ছা ইত্যাদি পরিকল্পনায় বিবেচনার বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। সুতরাং সঠিক পরিকল্পনা করতে হলে বিভিন্ন সদস্যদের মধ্যে অবশ্যই ভালো সম্পর্ক থাকতে হবে। সম্পর্ক ভালো থাকলে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সহজতর হয়।

পরিকল্পনা এমন হতে হবে যেন প্রয়োজনবোধে পরিবর্তন করা যায় অর্থাৎ নমনীয় হতে হবে। হঠাৎ করে কোনো জটিল সমস্যার সৃষ্টি হলে তা সমাধান করার উপযোগী পরিবেশ যেন সৃষ্টি করা যায়, সে বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। তা ছাড়া পরিকল্পনা যত দূর সম্ভব সহজ সরল হওয়া উচিত। পরিবারের সকলের গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।

সংগঠন

গৃহীত পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিবারের বিভিন্ন কাজগুলোর মধ্যে সংযোগ সাধন করার নাম সংগঠন। সংগঠনের পর্যায়ে কোন কাজ কোথায় ও কীভাবে করা হবে তা স্থির করা হয়। সংগঠনের পর্যায়ে পরিবারের বিভিন্ন সম্পদ সম্পর্কে বিশদ ভাবে খুঁটিনাটি চিন্তা করে কোথায় কী সম্পদ ব্যবহার করা হবে তা স্থির করা হয়ে থাকে। কাজ করতে গেলে—কোন কাজ কাকে দিয়ে করানো হবে, সে কাজ সম্পর্কে কার অভিজ্ঞতা আছে, কীভাবে কাজটি করতে হবে, কী কী সম্পদ ব্যবহার করা হবে ইত্যাদি বিবেচ্য বিষয়সমূহ সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত। এক কথায় কাজ, কর্মী ও সম্পদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করাকে সংগঠন বলে। সংগঠনের তিনটি পর্যায় আছে- প্রথম পর্যায়ে ব্যক্তি তার করণীয় কাজের বিভিন্ন অংশের একটি ধারাবাহিক বিন্যাস রচনা করে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে ব্যক্তি তার কোন কাজ আগে এবং কোন কাজ পরে হবে তার ধারাবাহিকতা রচনা করে। তৃতীয় পর্যায়ে ব্যক্তি তার একটি নির্দিষ্ট কাজ বা কাজসমূহ বিভিন্ন ব্যক্তি দ্বারা সম্পন্ন করার জন্য একটি কর্ম কাঠামো রচনা করে সুতরাং বলা যায়, যে কোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের সুচিন্তিত পদক্ষেপ গ্রহণ করাই সংগঠন।

নিয়ন্ত্রণ

গৃহ ব্যবস্থাপনায় গরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে নিয়ন্ত্রণ করা। নিয়ন্ত্রণ বলতে বোঝায় পরিবারের সকল ব্যক্তি শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে পারিবারিক লক্ষ্য অর্জনের কাজে নিয়োজিত কি না তা পর্যবেক্ষণ করা। পরিকল্পিত কর্মসূচি ও পূর্ব নির্ধারিত মান অনুসারে কার্য সম্পাদিত হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করা ও প্রয়োজনবোধে উপযুক্ত সংশোধনীর ব্যবস্থা করা এ পর্যায়ের কাজ ।

কাজ চলাকালীন অবস্থায় কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে যে পরিকল্পনা করা হয়েছে সে অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কি না, যাকে যে কাজ দেওয়া হয়েছে সে কাজ সঠিকভাবে করছে কি না ইত্যাদি। প্রয়োজনবোধে কাজের ধারা পরিবর্তন করে কাজ সম্পাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। পূর্বের আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কতোগুলো স্তরে পর্যায়ক্রমে অগ্রসর হয় যেমন-

কর্মে সক্রিয় হওয়া- প্রথম স্তরে কাজে উদ্যোগ নেওয়া বা সক্রিয় হয়ে কাজ করা বোঝায়। কাজের উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করাটা একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কী কাজ করতে হবে এবং কীভাবে করতে হবে জানা থাকলে কাজ আরম্ভ করা সহজ হয়।

পর্যবেক্ষণ করা- কাজ করার দ্বিতীয় স্তরে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কাজের অগ্রগতি পরীক্ষা করতে হয়। কাজটি করতে সম্পদের সঠিক ও সুষ্ঠু ব্যবহার হচ্ছে কি না, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কী রকম সাফল্যের সঙ্গে হচ্ছে ইত্যাদি পরীক্ষা করে দেখতে হয়। কাজ চলাকালীন অবস্থায় এগুলো পর্যবেক্ষণ করতে হয় ।

অভিযোজন করা/খাপ খাওয়ানো- নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির তৃতীয় স্তরে পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে হয় অথবা কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা মোকাবিলা করতে হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী গৃহীত পরিকল্পনায় কিছুটা রদবদল করে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করাই হচ্ছে অভিযোজন বা খাপ খাওয়ানো।

মূল্যায়ন

গৃহ ব্যবস্থাপনায় সর্বশেষ পর্যায় হলো মূল্যায়ন করা। কাজের ফলাফল বিচার বা যাচাই করাই হচ্ছে মূল্যায়ন ৷ পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণের ওপর কাজের ফলাফল নির্ভর করে। কাজটি করার পেছনে যে লক্ষ্য ছিল তা অর্জনে পূর্ববর্তী পর্যায়গুলোর অবদান পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে মূল্যায়ন করতে হবে। মূল্যায়ন ছাড়া কাজের সফলতা ও বিফলতা নিরূপণ করা যায় না। কাজের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে ফলাফল যাচাই করতে হয়। উদ্দেশ্য সাধিত না হলে ফলাফল ভালো হলো না বুঝতে হবে। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আরও সচেতন হতে হবে। মূল্যায়নের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জিত হলো কি না, আর যদি হয়ে থাকে, কতোটা হলো তা পরিমাপ করা যায়। লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হলে ব্যর্থতার কারণ নির্ণয় করে পরবর্তীতে সংশোধনের ব্যবস্থা করা যায়। সঠিক মূল্যায়নের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে- লক্ষ্য অনুযায়ী পরিকল্পিত কাজগুলো ঠিকমতো হয়েছে কি না কাজের সফলতা বা ব্যর্থতা নিরূপণ করা কাজে ব্যর্থ হলে ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করে পরবর্তীতে সংশোধনের মাধ্যমে কাজে সফল হওয়া।

কাজ – গৃহ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন পর্যায় অনুসরণ করে একটি পিকনিকের আয়োজন কর।

 

Content added By
Promotion